শহর রক্ষায় নদী ভরাট


25 April, 2016

সাইফুর রহমান, বরিশাল:

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কীর্তনখোলা নদী ভরাট করে বরিশাল শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ করছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, ছাড়পত্র ছাড়া শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। হুমকির মুখে পড়বে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবত সেতু ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বধ্যভূমি এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর ভেতরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট ভরাট করে বাঁধের নির্মাণকাজ চলছে। বধ্যভূমি এলাকার সাগরদী খাল থেকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার নদী এলাকায় এ কাজ চলছে। অথচ নদী রক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করার সুযোগ ছিল বলে মনে করেন বরিশাল নদী-খাল ও জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, নদী, খাল বা যেকোনো জলাশয় ভরাট করে উন্নয়নকাজ না করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা অমান্য করে সিটি করপোরেশন কীর্তনখোলা নদী ভরাট করে নগররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, ‘শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশন নদীর মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করছে। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়বে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ব্যাপারে ১১ এপ্রিল সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু করপোরেশন এখনো ওই চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয়ের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘১১ জানুয়ারি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পাই, কীর্তনখোলা নদীর পাড় বরাবর প্রায় ৪০ /৫০ ফুট নদীর ভেতরে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে না জানিয়ে ছাড়পত্র হীনভাবে এই কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে গত ১২ জানুয়ারি মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার ২৪ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণে এবং বাকি ছয় কোটি টাকা ব্যয় হবে সড়ক নির্মাণে। করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র এ কে এম শহীদুল্লাহ ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগরদী খালের পশ্চিম পাড়ে শহররক্ষা বাঁধ নদীর মধ্যে দিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটি কীভাবে করা হচ্ছে, তা আমাকে জানানো হয়নি।’ কাজটি পেয়েছে নিয়াজ ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে বাস্তবে বাঁধ নির্মাণের কাজটি করছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মোশাররফ আলী খান। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা ও কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। কিন্তু মোশাররফ আলী খান বলেন, ‘আমি ওই কাজের ঠিকাদার কথাটা সঠিক নয়। তবে কাউন্সিলর হিসেবে আমি তো তদারকি করতেই পারি। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা যেভাবে অ্যালাইনমেন্ট দেখিয়ে দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’ জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোতালেব হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদী ভরাট করা হচ্ছে, কথাটা সঠিক নয়। ওই এলাকায় চরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কারণে নদীর প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না।’ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার বলেন, ‘পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া এত বড় প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার সুযোগ নেই। তবে ওই অনুমোদনের কোনো কপি আমার কাছে বর্তমানে নাই। কয়েক দিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু শহররক্ষা বাঁধের কাজের এই পর্যায়ে ওই চিঠির উত্তর দেওয়ার সুযোগ নেই।’ যোগাযোগ করলে বরিশাল জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘শহররক্ষা বাঁধের নামে নদী ভরাট করে ফেলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে নদী কমিশনের সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জানতে চাইলে তারা জানিয়েছে, অনুমোদন ছাড়াই ওই কাজ চলছে।’

Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840001

Photo Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/840001