একজন শেখর রায়

  • 100_2696
    ছবি-১
  • 100_2699
    ছবি-২

-এনায়েতুর রহীম (94NL04)

১২ মে ২০১৩

গ্রীন বে, উইসকনসিন, আমেরিকা

শেখর ভাইকে নিয়ে কী লিখবো, কিংবা আদৌ কিছু একটা লেখা হবে কি না — এরকম ভাবতে ভাবতে তিন সপ্তাহ কেটে গেল। চোখ বন্ধ করতে হয়না, শেখর ভাইকে নিয়ে লেখার চিন্তা করলেই ভেসে ওঠে শত স্মৃতি। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ টানা দশ বছর শেখর ভাইয়ের সাথে ছিলাম। ২০০৩ এ দেশ ছাড়ার পরে যোগাযোগ হতো ইমেইলে। সে অর্থে ২০১৩ পর্যন্ত শেখর ভাইয়ের সাথে টানা বিশ বছরের জানাশোনা। জীবনের দৈর্ঘের তুলনায় বেশ লম্বা সময়।

ফটোগ্রাফার, ফিল্ডওয়ার্কার, শিক্ষক, বন্ধু, গুরু, রসিক – নানা ভাবে তাঁকে বিশেষায়িত করা যায়। যারা শেখর ভাইকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা একমত হবেন আমি একটুও বাড়িয়ে বলছিনা, কিংবা আবেগ থেকে বলছিনা। আজ শেখর ভাই আমাদের মাঝে নেই; এই ভাবনাটিই আমার বুক ভেঙে দেয়। কখনো ভাবিনি শেখর ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে হবে, শেখর ভাইয়ের নামে লেখা লিখতে হবে এবং তার নাম দিতে হবে shekhar_roy.docx. প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি স্মৃতি লিপিবদ্ধ করতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও শেখর ভাইয়ের জন্য কিছু লেখা তার প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই আমাকে লিখতে হবে।

 সোনার গাঁ, ১৯৯৩

১৯৯৩ সালের কোন এক সকাল। নটর ডেম ন্যাচার স্ট্যাডি ক্লাবের পঞ্চান্ন তম সদস্য হিসেবে কদিন আগে যোগ দিয়েছি। সেদিন জীবনের প্রথম ফিল্ড ট্রিপে যাওয়ার জন্য কলেজে এসে অপেক্ষা করছি, কাঠবাদাম গাছের নীচে। ন্যাচার ক্লাবের একটিভিটির হায়ারার্কি যারা যানেন তারা মাত্রই বুঝে গেছেন প্রথম ফিল্ডট্রিপে সোনার গাঁও যাওয়া আমার জন্য মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত। ফিল্ডট্রিপের কিছুই জানি না। শুনেছি ফিল্ডট্রিপে গিয়ে এরা পাখি টাখি দেখে। আমার আগ্রহ প্রকৃতিতে—পাখি তার একটা অংশ মাত্র। সবকিছু স্মৃতিতে নেই, তবে রাজিব ছিল, ছিল সাখাওয়াত, আর ছিলেন শেখর রায়। গুলিস্তানের কোন এক জায়গা থেকে সোনার গাঁর বাসে সবাই উঠে পড়লাম। কেউ সীট পেল আর কেউ দাঁড়িয়ে থাকলো। বাস চলছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম শেখর ভাই সবাইকে বসার ব্যবস্থা করে মাঝখানের আইলে দাঁড়িয়ে থাকলেন যতক্ষণ পর্যন্ত আর কোন সীট পাওয়া না গেল। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নেতাদের আমরা আগে বসার ব্যবস্থা করি—এমনটাই জানতাম। কিন্ত সেদিনই প্রথম দেখলাম নেতা বসেন সবার শেষে। তখনই বুঝে গেলাম ন্যাচার ক্লাব একটু আলাদা। এরা শুধু পাখিই দেখেনা, এখান থেকে আরো অনেক কিছুই শেখা যাবে।

সেদিনের ফিল্ডট্রিপের স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বলে। কিন্তু লেখার ভাষা আমার নেই। শেখর ভাই আমাদের সামনে থেকে লিড দিলেন। বাস থেকে নেমেই কয়েকটা দোকানপাট। তার পাশ গলে আমরা দল বেঁধে ঢুকে পড়বো। স্ট্যান্ডের পাশেই একটা তালগাছ; সেখানে বাবুইয়ের বাসা ঝুলছে। রাজিব চলে গেল সেসবের ছবি তুলতে। তখন ফিল্ম ক্যামেরার যুগ। ক্যামেরাও হাতে গোনা কয়েক জনের কাছে। পুরো ১০-১২ জনের টিমে হয়তো দুটো বাইনোকুলার আর দুই-তিনটা ক্যামেরা। শেখর ভাই আমাদের প্রথমেই ছোট্ট করে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে স্থানীয়দের সাথে ব্যবহার করতে হবে, কী বলতে হবে কেউ যদি আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চায়। এরপর বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে উত্তর দিলে প্রশ্নকারী বুঝবে আমরা দলে আসলে অনেক ভারী অর্থাৎ আমাদের ছোট ভেবে কোন দুশ্চিন্তা মাথায় থাকলেও যেন পিছু হটে। এগুলোই ফিল্ড সার্ভাইভালের প্রাথমিক পাঠ, যা শেখর ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি।

তখন সম্ভবত বর্ষা আসি আসি করছে কিংবা এসেছে। কাজী পেয়ারার গাছে ভর্তি চারপাশ। শেখর ভাই আমাদের তার উপর একটা ছোট লেকচার দিয়ে দিলেন। এর পর হেঁটে হেঁটে চলছি তো চলছিই। রাস্তা থেকে পাখি খুব একটা দেখা যাচ্ছে না, সম্ভবত ভিতরে ঢুকতে হবে। একসময় আমরা রাস্তার শেষ প্রান্তে চলে এলাম। সেখানে বর্ষার পানিতে রাস্তা এবং চারপাশ ডুবে আছে। অসংখ্য ছোটবড় নৌকা ভীড় করে আছে সওয়ারী নিয়ে যাত্রার অপেক্ষায়।

একই পথে আবার ফিরে আসা। এর পর গন্তব্য অন্যদিকে। ফেরার পথে রাস্তা থেকে অনেক নীচে সবুজ ফসলের ক্ষেতে কী যেন একটা দেখা গেল। সম্ভবত হলদে পাখি। রাজিব তার টেলিফটো লেন্স নিয়ে সবার আগে, তার পিছে পিছে শেখর ভাইও সম্ভবত এগিয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে তার স্বভাবসুলভ “পোলাপাইনস তোমরা এইদিকে থাকো” আমি দেখি ছবিটা নিতে পারি কিনা—এই বলে ক্ষেত্রের মধ্যে ঢুকে গেলেন।

স্পষ্ট মনে আছে সেদিন যাদুঘর বন্ধ ছিল। আমরা বাইরে বসে সারাদিনের দেখা পাখির তালিকা আপডেট করছিলাম। শেখর ভাই নাম বলছেন, আমরা মিলিয়ে নিচ্ছি। আমি তখনও পাখিটাখি তেমন চিনি না। তাই দেখছি এরা কী করে। শেখর ভাইয়ের তালিকা শেষ হলে অন্যরা কেউ কিছু দেখেছে কিনা সেটাও জানতে চাইলেন। কেউ নতুন কোন প্রজাতি দেখলে শেখর ভাই তাকে নানা প্রশ্ন করে নিশ্চিত হতে চাইছেন সে ঐ প্রজাতি ঠিক মত চিহ্নিত করতে পেরেছে কিনা। একজন লিডার কিভাবে কোয়ালিটির ব্যাপারে সিরিয়াস থাকে সেটাও শেখর ভাইয়ের মাঝে দেখলাম ।

 বোটানিক গার্ডেনে অনন্য অভিজ্ঞতা

এর পর অনেক দিন গড়িয়েছে। ফিল্ডে আমি শেখর ভাইয়র সাথে হয়তো শত শত ঘন্টা কাটিয়েছি। শেখর ভাইয়ের সাথে ফিল্ড ট্রিপ মানেই আনন্দ, দুষ্টামি, সিরিয়াসনেস, নতুন কিছু শেখা—এর সবগুলিই। বছরের পর বছর শেখর ভাইয়ের সাথে ট্রিপ করে আর সেইসাথে নিজে পাখি নিয়ে ফিল্ড গাইড ঘেঁটে একটা সময়ে দাবী করা শুরু করলাম মিজান স্যার আর শেখর ভাইয়ের পরে যদি পাখি চিহ্নিত করা বিষয়ে যদি কেউ থাকে তো সেটি আমি। এই অর্জন কোন বই পড়ে হয়নি, হয়েছে ফিল্ড থেকে অভিজ্ঞতার আলোকে। সর্বশেষ গণনা অনুযায়ী আমি প্রায় একশ তিরিশ প্রজাতির পাখি চোখে দেখেছি আর প্রায় আড়াইশ পাখি চিহ্ণিত করতে পারবো বলে বিশ্বাস করতাম। এসবের পিছনে শেখর ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। হ্যাটস অফ টু ইউ, শেখর ভাই।

শেখর ভাইয়ের সাথে আমার সবচেয়ে বেশী সময় কেটেছে বোটানিক গার্ডেনে। একদিনের কথা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন আমরা ট্রিপ করেছিলাম দুই ধাপে। প্রথম ধাপে জুনিয়রদের নিয়ে বোটানিকে দুপুর অব্দি কাটিয়ে নামাজের বিরতি দেয়া হয়েছিল। নামাজের আগে আগে আমরা একটু ছায়ায় বসে মিলিয়ে নিলাম কে কী পাখি দেখেছি। এর পর শেখর ভাই প্রস্তাব দিলেন ট্রিপ আরো লম্বা হবে এবং যারা থাকতে চায় তারা থাকতে পারে। আমার ঠিক মনে নেই আমি আর শেখর ভাইয়ের সাথে আর কে সেদিন ছিল। সম্ভবত সাখাওয়াত থেকে থাকবে হয়তো।

দুপুরের পর আমরা বোটানিক গার্ডেনের পিছনের গেট দিয়ে বের হয়ে তুরাগের পাড় ধরে হাঁটা শুরু করলাম। নদীতে নতুন পানি এসেছে, নানা প্রজাতির খঞ্জন পাখির আনাগোনা সেখানে। আরো আছে নানা ধরনের টার্ন (Tern) আর সুইফট পাখি। সেদিন জলপিপি (Bronze-winged Jacana) দেখেছি বেশ কয়েকটা। অনেক দূর পর্যন্ত সেদিন হেঁটেছিলাম শেখর ভাইয়ের সাথে। কথা হচ্ছিল পুরনো দিনের ফিল্ডট্রিপ নিয়ে। ড. আলী রেজা অনেক আগে বোটানিকে এবং তার আশেপাশে একশর বেশী প্রজাতির পাখি দেখেছিলেন। আমরা সেদিন দেখেছিলাম সত্তর প্রজাতির পাখি। জানিনা এখন সারাদিন ফিল্ডট্রিপ করে কত প্রজাতির পাখি দেখা যায় বোটানিক গার্ডেনে।

সন্ধ্যার আগে আগেই আমরা গার্ডেন থেকে বের হয়ে আসি। সেদিনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে স্মরণীয় এই কারণে যে শেখর ভাইয়ের সাথে সারাদিন কাটিয়েছিলাম, দেখেছিলাম প্রায় সত্তর প্রজাতির পাখি। অনেক কিছুই শিখেছিলাম যা বই পড়ে কিংবা ক্লাসে পাঠ নিয়ে শেখা যায় না। শেখর ভাই ছিলেন আমার ফিল্ডওয়ার্কের গুরু।

শেখর ভাইয়ের সাথে রাঙ্গামাটি ভ্রমণ ছিল আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ। আমাদের সাথে ছিল নাদিম, বাবুল পালমা, সুমন হালদার, শেখর ভাই, আরও দুই জন সম্ভবত যাদের নাম মনে পড়ছে না। এই ভ্রমণ নিয়ে অন্য কেউ লিখুক।

 শেখর ভাইয়ের সাথে শেষ কথা

কানাডায় আসার পরে শেখর ভাইয়ের সাথে টুকটাক ইমেইলে যোগাযোগ হতো। নিসর্গের জন্য উনি লেখা দিতেন। পর্ববর্তীতে যোগাযোগ কমে আসে। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি, শেখর ভাই চাকুরীর প্রয়োজনের ঢাকা ছাড়েন। উনিও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই একদিন মাথায় বজ্রপাতের মত খবর আসে শেখর ভাইয়ের ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকি প্রতিনিয়ত। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। শেখর ভাই ভারতে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন। কিন্তু পরিস্থিতি আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে। আমি খুবই অস্থির হয়ে পড়ি। একদিন ক্যাপটেন কাওসার ভাইকে ফোন দেই। কাওসার ভাই খুবই দু:খ ও আক্ষেপ নিয় বলেন “শেখরের মতো মানুষগুলোর কেন এরকম হয়”। আমি নির্বাক হয়ে শুধু শুনি। বলার কোন ভাষা পাই না।

২০১১ এর ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে শেখর ভাইয়ের সাথে আমার শেষ কথা হয়। রুবেলের কাছে জানতে পারি শেখর ভাই একটু ভালো আছেন। রাসেলের কাছ থেকে ফোন নাম্বার নেই। সাথে সাথেই ফোন করি। কথা হয়, এক মিনিটেরও কম। শেখর ভাইয়ের গলা অনেক ভারী শোনায়। আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি তার নাম্বার কিভাবে পেয়েছি। আমি কী জিজ্ঞেস করবো ভেবে পাইনা। কেমন আছেন সেটাও জিজ্ঞেস করতে সংকোচ বোধ হয়। আর জিজ্ঞেস করেও প্রিয় মানুষটিকে কষ্ট দিতে চাইনি। কথা তেমন এগোয় না। আমি আশাবাদ দিয়ে ফোন রেখে দেই।

এর পরে আমি রুবেলের কাছ থেকে ঘনঘন আপডেট পেতে থাকি। এতটাই অস্থির থাকি যে প্রায়ই নটর ডেম কলেজ আর মিজার স্যারকে স্বপ্নে দেখি। সেটা জেনে অস্ট্রেলিয়া থেকে নাদিম মজা করে বলে, স্যারের সাথে দেখা হলে স্যার অতি অবশ্যই আপনাকে ঝারি মারবেন, আর বলবেন, “বুলবুল থাকো কই, দেখা যায় না যে?” আমার অস্থিরতা আরো বাড়ে। আমি যেন স্যারের বকা শুনতেই নটর ডেমে যেতে চাই।

যেদিন শেখর ভাই চিরবিদায় নেন দেদিন রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নটা যে এতটাই মিলে যাবে তা কল্পনাতীত। স্বপ্নে দেখি সেদিন আমি মতিঝিলে এবং সেখানে মিজান স্যারের সাথে দেখা। আমি কোন একটা কারণে স্যারকে জড়িয়ে ধরে অসম্ভব কাঁদছি। ঘুম ভেঙেও আমি বুঝতে পারিনি এতটা দু:সংবাদ অপেক্ষা করছে। ফেসবুকে রুবেল পোস্ট করল সেই অসম্ভব খবরটি—শেখর ভাই আর নেই।

সেদিনের  মনের অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। মুহূর্তেই মনে পড়ে গেল শত শত স্মৃতি। যেন এক ন্যানো সেকেন্ডে দীর্ঘ দশ বছরের ফিল্মটিকে অতিদ্রুত রিলে করে আমাকে দেখানো হলো। আমি কাঁদলাম। কেঁদে একটু হালকা হওয়ার চেষ্টা করলাম। নিজেকে বোঝালাম একদিন সবাইকে যেতে হবে।

 কেমন ছিলেন শেখর রায়

আমার খুবই কষ্ট হয় শেখর ভাইয়ের পরিবারের কথা ভেবে। তার ছেলে এবং বৌদির কথা চিন্তা করে। শেখর ভাই বাবা হিসেবে কেমন ছিলেন, কিংবা পরিবারের একজন হিসেবে কেমন ছিলেন সেটা তার পরিবারই ভালো জানেন। প্রিয়ন্ত, তোমাকে বলছি—তোমার বাবা ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ন মানুষ। তিনি ছিলেন আমার মত অনেকের ফটোগ্রাফির গুরু, ফিল্ডওয়ার্কের গুরু। তোমার বাবা শেখর রায়ের কাছেই আমি সহ আমার মত অনেকেই পাখি চেনা শিখেছি, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা শিখেছি। প্রিয়ন্ত, তোমার বাবা আমাদের অনেককেই নিজের হাতে ছবি তোলা শিখিয়েছেন। তখন ডিজিটাল ক্যামেরা ছিলনা; শেখর রায় আমাদের এক্সপোজার শিখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে ছবি ডেভলপ করতে হয়, কিভাবে ছবির ফ্রেমিং করতে হয়। তোমার বাবা আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে পাখি চিহ্নিত করতে হয়, কিভাবে প্রকৃতির জিনিসগুলোকে আহত না করেই প্রকৃতি থেকে শিখতে হয়, কিভাবে নি:শব্দে পাখির খুব কাছাকাছি যেয়ে ছবি তুলে আনতে হয়। প্রিয়ন্ত তুমি হয়তো একদিন জানবে তোমার বাবা কত ভালো একজন লেখক ছিলেন। তোমার জন্মের অনেক আগে থেকেই উনি শিশুদের জন্য দৈনিক পত্রিকাগুলোকে লিখতেন। ওনার লেখার বিষয়বস্তু ছিল শিশুদের জন্য প্রকৃতিবিষয়ক গল্প। তুমি জানবে তোমার বাবা খুবই ডেডিকেটেড একজন পাখিপ্রেমিক ছিলেন। তুমি জানবে তোমার বাবা একজন অসাধারণ ফটোগ্রাফার ছিলেন। তুমি হয়তো একদিন জানবে টুনটুনি পাখির ছবি তোলা কত কঠিন। অথচ খুবই সাধারণ লেন্স দিয়ে কিভাবে নিজেকে আড়াল করে টুনটুনির একদম কাছে গিয়ে তার ছবি তোলা যায় সেটি তোমার বাবার চেয়ে আমাদের আর কেউ ভালো জানতো না। এখনো জানে না।

শেখর রায় আমাদের সবার থেকে সেরা। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া আমাদের কারও পক্ষেই এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। শেখর রায় তাই অনন্য—অনেকের মধ্যে এক। সব কিছু ছেড়ে চলে গেলেও শেখর রায় আমাদের সবার মাঝে একজন শেখর রায় হয়েই চিরদিন বেঁচে থাকবেন।

 শেখর ভাইয়ের কিছু ছবি

আমার কাছে শেখর ভাইয়ের মাত্র কয়েকটা ছবি আছে। উনি যে এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন সেটা তো কেউ ভাবেনি। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। ২০০৫ সালে আমি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলাম তখন এনএসএসবি’র মিটিংএ শেখর ভাইয়ের সাথে এই ছবিগুলোই আমার তোলা একমাত্র ছবি।

ছবি ১: হাস্যজ্বল শেখর ভাই (ডান থেকে প্রথম)। সর্ব বামে ক্যাপ্টনে কাওসার মোস্তফা, সবুজ টি-শার্টে শুহান সাঈদ। অন্যদের নাম মনে পড়ছে না। জুলাই ২৭, ২০০৫, সন্ধ্যা ৬:৫২, এনএসএসবি অফিস, মতিঝিল, ঢাকা।

ছবি ২। আমার সাথে শেখর ভাইয়ের একমাত্র ছবি। বাম থেকে দুই জনের নাম মনে পড়ছে না, এর পর শেখর রায়, সাদা শার্টে আশরাফ ভাই, তার পর সাজেদ ভাই, আমি, আর সর্বডানে কাওসার ভাই। জুলাই ২৭, ২০০৫, সন্ধ্যা ৬:৫৩, এনএসএসবি অফিস, মতিঝিল, ঢাকা।