উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টর – একমাত্র লেকটিও দূষিত

6 June 2016. অরূপ দত্ত:

লেকটি খনন করা হয়েছিল সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য। আরও একটি কারণ, এলাকাকে পরিবেশবান্ধব করে তোলা। কিন্তু উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের লেকটি এখন ময়লা- আবর্জনায় ভরা। লেকপাড়ে দাঁড়িয়ে কেউ যদি সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, নাকে রুমালচাপা দিতে হবে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এমন অবস্থাই দেখা যায়। সেক্টর এলাকায় নাগরিক সেবা বলতে যা বোঝায়, তা প্রায় নেই। যা কিছু প্রাপ্তি, এসেছে এলাকার কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে। একটিও খেলার মাঠ নেই। কাঁচাবাজার নেই। মসজিদও নেই। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, সেক্টরের যে লে-আউট প্ল্যান, তাতেও ঘাটতি। সেখানে খেলার মাঠ, মসজিদ—কিছুই রাখা হয়নি। লেক রাখা হয়েছে, কিন্তু সেই লেক সুরক্ষার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নিয়মিত কোনো ব্যবস্থা নেয় না। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ২ নম্বর সড়কসংলগ্ন লেকপাড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ভাসছে ডাবের খোসা, ছেঁড়া স্যান্ডেল, জুতাসহ গৃহস্থালির বারোয়ারি বর্জ্য। লেকপাড়ে পড়ে আছে পরিত্যক্ত কাঁথা-কম্বল, ডিম রাখার ভাঙা খাঁচি, পশুর হাড় সবই। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আকিল আহমেদ সকাল-সন্ধ্যায় লেকপাড়ে আসতে ভালোবাসেন। গতকাল অসময়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। বললেন, ‘বাসায় বিদ্যুতের ঝামেলা হয়েছে। একটু বাতাসে দাঁড়াতে এসেছি, কিন্তু শান্তি পাচ্ছি না। লেকপাড়ে দাঁড়ালে মনে হয় আবর্জনার প্রদর্শনী দেখছি।’ ৫ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দীন বলেন, রাজউকের কাছে বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। এমনকি সমিতির প্রতিনিধিদল রাজউক কার্যালয়ে গিয়ে দেখাও করেছে, কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। লেক বাঁচাতে সমিতি চেষ্টা করে যাচ্ছে। উত্তরা প্রকল্পের পরিচালক রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। পরে রাজউকের উত্তরা স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, তারা যতটা সম্ভব লেক রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। কিছু লোকজন লেককে ডাস্টবিন মনে করে গৃহস্থালির যাবতীয় বর্জ্য ফেলে। জনসচেতনতা ছাড়া লেক রক্ষা করা কঠিন। এলাকায় কোনো খেলার মাঠ না থাকলেও ৫ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের পেছনে একটি শিশুপার্ক রয়েছে, যা সমিতিরই তৈরি। সেক্টরের নারীরাও এই পার্কে হাঁটেন। আরেকটি পার্ক রয়েছে কিছু দূরে। সেখানে সন্ধ্যার পর হাঁটাচলা অসম্ভব। বখাটেদের আড্ডা জমে। চলে মাদক সেবন। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, উচ্ছৃখলদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এলাকার রাস্তাঘাট বেশির ভাগই ভাঙাচোরা। ২২টি সড়কের মধ্যে আটটির মেরামতকাজ চলছে। বাকিগুলো এ বছর হবে না। পরবর্তী বাজেটে সেগুলোর সংস্কার হবে বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কুদরত উল্লাহ বলেন। উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে স্কুল-কলেজ নেই। এলাকার ৪ নম্বর সড়কের বাসিন্দা গৃহিণী আফিফা রহমান বলেন, এই সেক্টরে ভালো বা খারাপ কোনো স্কুলই নেই। এটা তাঁদের জন্য অসুবিধাজনক। সন্তানকে দূরে অন্য সেক্টরে নিয়ে যেতে হয়। ৭ নম্বর সড়কের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘৪ নম্বর সেক্টরে ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৭ নম্বর সেক্টরে ৩০টি। কিন্তু ৫ নম্বর সেক্টরে কোনো স্কুল নেই, এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। বেশি থাকার দরকার নেই, অন্তত তিনটি স্কুল থাকলে সমস্যা কী? তাতে যানজট তো হবে না।’ তবে স্কুল না থাকলেও যানজট দেখা গেল সেক্টরের ১ ও ২ নম্বর সড়কে। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। সংকেত বাতি কাজ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। আর রাতে সেক্টরের অনেক সড়কে বাতি নেই। বিশেষ করে সেক্টরের ড্রাইভওয়েতে যাওয়ার পথে । এতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। এলাকায় একটিও মসজিদ নেই বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ৩ নম্বর সড়কের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুর রহমান। বললেন, অন্তত জুমার নামাজ আদায় করার জন্য যখন রোদের মধ্যে অন্য সেক্টরে যেতে হয়, অনেক অসুবিধা হয়। ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কুদরতউল্লাহ বলেন, বাতি না জ্বলার কারণ পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/879607

Photo Source: www.prothom-alo.com/bangladesh/article/879607